জ্যাকি, ১৭ বছর বয়সী ছেলে
জ্যাকির জীবন সম্পর্কে
জ্যাকি তার বাবা আর মায়ের সঙ্গে বাস করে। তার মা কোনও কাজ করেন না, তার বাবা রিক্সা চালান। জ্যাকির এক বোন আছেন, তিনি বিবাহিত এবং স্বামীর সঙ্গে থাকেন।
২০১৮ সাল থেকে জ্যাকি কাজ করছে। সে হেলপার হিসাবে একটা জুতার কারখানায় কাজ করে। তার আগে সে স্কুলে পড়ত, কিন্তু পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে সে পড়াশোনা বন্ধ করে। জ্যাকি নিজেই কাজটা খুঁজে পেয়েছে।
জ্যাকি তার এলাকাতে স্বস্তিতে আছে বলে মনে হয় না, মনে হয় যেন সে সবসময়েই সতর্ক আছে এবং কখনও কখনও প্রত্যক্ষভাবে বোঝে সে এলাকার অন্যান্য ছেলে ও যুবকরা তাকে শত্রু বলে মনে করে।
শিশুটির বাড়িতে CLARISSA গবেষক
“আমি সবসময়েই নিরাপত্তার অভাব বোধ করি, এর কারণ হল সমবয়সী অনেকের সঙ্গেই আমার দেখা হয়, কিন্তু আমি জানি না কার মনে কী আছে … ছেলেরা আমাকে হুমকি দিতে পারে, আমার ফোন আর অন্যান্য জিনিস কেড়ে নিতে পারে, আমি কিছু বলতে পারি না।
একটা কারখানার বাইরে
১৩ বছর বয়সে কাজ করা শুরু করার পরে জ্যাকি বিভিন্ন কারখানায় কাজ করেছে, প্রায়ই সে চাকরি পরিবর্তন করে।
২০২২ সালের ৪ঠা অগাস্ট জ্যাকি বাড়ি থেকে চামড়ার কারখানায় কাজ করতে যাওয়া এবং যেখানে ১১-ঘণ্টার শিফটে তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রেকর্ড করে। জ্যাকি আমাদের গবেষককে তার বাড়িতে এবং কাজের জায়গায় স্বাগত জানিয়েছিল, এবং তার সঙ্গে কাজ করা সম্ভবত সে পছন্দ করেছিল।
আঠা এবং জুতোর সোল
জ্যাকি তার কর্মক্ষেত্রে
কয়েকটি ওয়ার্কস্টেশন অথবা কাজকে সে অন্যগুলির থেকে বেশি পছন্দ করে। দিনের প্রথম ভাগে জ্যাকি চামড়া কাটে আর আঠা লাগায়। প্রোডাকশনের এই অংশটিকে সে কঠিন বলে মনে করে। দুপুরে (বাড়িতে) খাওয়ার পরে জ্যাকির কাজের পরিবর্তন হয়, তখন সে জুতোর সোল নিয়ে কাজ শুরু করে। এই কাজটা করতে তার ভাল লাগে, এতে একটি যন্ত্র ব্যবহার করতে হয়।
জেকাজের চাপে জ্যাকি ব্যতিব্যস্ত থাকে এবং “লোড শেডিং”, অর্থাৎ জ্বালানী সরবরাহ কম থাকায় সময়সূচী অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে সে বিশেষভাবে অস্বস্তিতে পড়ে (তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়ে যায়। লোড শেডিং এখন ঢাকা শহরে একটা সাধারণ ব্যাপার)। একই সঙ্গে গরম থাকলে আর আলো না থাকলে কাজ করতে খুবই অসুবিধা হয়, বিশেষত যখন আঠা নিয়ে কাজ করতে হয়।
একটা জুতোর কারখানার ভিতরে
“আমি কোথাওই নিরাপদ বোধ করি না, এটা আমার এলাকা না। আমি সেখানে থাকি, যেখানে আমার লোকজন আছে”
জ্যাকির দিন
শিশুর অভিজ্ঞতা
আজ গবেষক আমার সঙ্গে থাকায় আমি খুশি। কারখানাতে একটা সমস্যা হয়েছে, আর তাই আমাদের বসের মাথা গরম হয়েছে।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
তারা তিনজন যে ছোট্ট ঘরটিতে থাকে, সেখানে জ্যাকি তার পরিবারের সঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করছে। সে আমাকে তার বাবার পাশে বসতে বলল।
একটা সিগারেট টানার পরে অনেকগুলি মেয়ের সঙ্গে জ্যাকি কাজের জায়গার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করল।
একটা কারখানার বাইরে
শিশুর অভিজ্ঞতা
আজ কাজের খুব চাপ আছে, প্রোডাকশনের যে অংশে আমি কাজ করি আজ তারা সেটা বদলে দিয়েছে, তাই আমি অস্বস্তি বোধ করছি। চা খাওয়ার পরে আমার বেশ ভাল লাগছে।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
সকালে জ্যাকি চামড়া কাটা আর আঠা লাগানোর কাজ করে। মনে হয় তাকে একটানা কাজ করে যেতে হয়, অল্প সময়ের জন্য তার একটা বিরতির এবং একটু চা পানের প্রয়োজন হয়- এর ফলে কঠিন কাজ করার জন্য সে শক্তি ফিরে পায়।
সকাল ১০টা নাগাদ জ্যাকি জলখাবার খেয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত একটানা কাজ করে যায়, তারপরে দুপুরের খাবার খেতে সে বাড়ি যায়। আমি লক্ষ্য করেছি যে কাজ করার সময় শ্রমিকরা একে অন্যের সঙ্গে কথা বলে না।
জ্যাকি তার এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমি বাড়িতে গিয়ে টুকটাক কাজ করি। আমার খিধে লেগেছে। খাওয়ার পরে আবার বেশ ভাল লাগে। আমি যখন কাজের জায়গার দিকে হাঁটতে শুরু করি, তখন আমি বুঝতে পারি যে খাবার খেয়ে আমার বেশ সতেজ লাগছে আর আমার সেটা ভালো লাগে।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
জ্যাকি স্পষ্টতই খুব ক্ষুধার্ত
বাইরে থেকে একটি ট্যানিং কারখানা
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমার ভাল লাগছে, কারণ তারা প্রোডাকশন লাইনে আমার জায়গা বদলে আমাকে আমার পছন্দের কাজ দিয়েছে, কিন্তু আমাকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। লোড শেডিংয়ের (সময়সূচী অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ) সময়ে আমার অস্বস্তি হয় । তখন বাড়িটা খুব অন্ধকার হয়ে যায়। লোড শেডিং হলে বিদ্যুৎ থাকে না, আর এর অর্থ হল খুব গরম লাগা।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
দুপুরের খাওয়ার পরে জ্যাকির কাজের পরিবর্তন হয়। সে একটা যন্ত্র ব্যবহার করে জুতোর সোল বানায়। তুলনামূলকভাবে, সে এটি খুব পছন্দ করে আর নতুন উদ্যমে কাজ করে।
চায়ের দোকান
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমি ক্লান্ত। একটা চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেলে আমার ভাল লাগবে। আমি আমার বন্ধুদের সঙ্গে আছি আর গল্প-গুজব করছি।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকি বাড়ি ফিরে যায়। একটা চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে সে চা-সিগারেট খায়। সারাদিন কাজ করার পরে তার মেজাজ ভাল নয়। কিছুক্ষণ পরে জ্যাকির বাবা চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে যান, আমরা একসঙ্গে বাড়িতে যাই।
আমরা তাদের বাড়িতে পৌঁছানোর পরে আমি জ্যাকির বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলি। জ্যাকি আবার বাইরে গেল, আমার মনে হয় সে চায়ের দোকানে অন্য ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারতে গেল।