শিশুদের মুখে শোনা তাদের গল্প জীবনের এক দিন

রাজ, ১৬ বছর বয়সী ছেলে

শিশুদের আসল নাম সুরক্ষিত
১৬ বছর বয়সী রাজ, দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ করে US$৫-এরও কম পায়। সে নির্মাণ শিল্পে কাজ করে, কাজটি বিপজ্জনক এবং ক্লান্তিকর, আর সে মনে করে যে বয়স্ক মানুষদের সঙ্গে সে কাজ করে তারা তার সুবিধা নেয়, তাকে বিশেষভাবে কঠিন কাজ দেয়। সে দুর্ঘটনার ভয় পায়, ঢাকায় নির্মাণ শিল্পে এটি একটি বাস্তব ঝুঁকি।

রাজের জীবন সম্পর্কে

রাজ তার মা আর বাবার সঙ্গে ঢাকার গজমহলে বাস করে। রাজের মায়ের শরীর ভাল নয়। কোভিড-১৯ অতিমারীর আগে পর্যন্ত রাজ স্কুলে পড়ত, ১৪ বছর বয়সে স্কুলে যাওয়া ছেড়ে দেয়। বিগত দুই বছর ধরে সে কাজ করছে, তবে সে কোনও এক ধরণের কাজ করে না (যেদিন সে কাজ পায় শুধু সেইদিনই সে কাজ করে)। রাজ নির্মাণ শিল্পে অথবা চামড়ার কারখানায় কাজ করে (চামড়া কাটে আর রাসায়নিক দিয়ে চামড়ার প্রক্রিয়া করে)। বিল্ডিং সাইটে নির্মাণের কাজ করে সে দিনে ৫০০ BDT (US $৫)-এরও কম আয় করে।

নির্মাণাধীন একটি উঁচু বাড়ি

রাজ নিয়মিত যে দুই ধরনের কাজ করে তা বিপজ্জনক। চামড়া প্রক্রিয়া করার সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে রাজের চামড়ায় ক্ষত হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ করার সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সে খুবই উদ্বিগ্ন।

রাজ নির্মাণ-স্থলে কাজ করছে

রাজ নিয়মিত যে দুই ধরনের কাজ করে তা বিপজ্জনক। চামড়া প্রক্রিয়া করার সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক থেকে রাজের চামড়ায় ক্ষত হয়েছে এবং নির্মাণ কাজ করার সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও সে খুবই উদ্বিগ্ন।

An illustration of a bamboo ladder

একটি বাঁশের মই

রাজ নির্মাণ-স্থলে কাজ করছে

নির্মাণ কাজ শারীরিকভাবে অত্যন্ত শ্রমসাধ্য, সে খুব ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়ে। কাজের সময়েও রাজ নিজেকে একলা মনে করে, কারণ বয়স্ক শ্রমিকরা তার সঙ্গে মেলামেশা করে না, অথবা চামড়ার কারখানায় সে তার সমবয়সীদের সঙ্গে কাজ করে আর তাদের সঙ্গে কথাবার্তাও বলে।

কাজ শেষ হয়ে গেলে রাজ তার বন্ধুদের সঙ্গে তার এলাকাতেই সময় কাটায়

(যদিও তার সঙ্গে থাকা CLARISSA গবেষক এই সময়ে তার সঙ্গে থাকেন না)। এটা হল রাজের সাধারণ একটা কাজের দিন। যে দিন সে কাজ না করে, রাজের সেই দিনটা অন্য রকমের হয়।

এই কাজের ঝুঁকির বিষয়ে সবসময়েই ভাবতে থাকলে তুমি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। আমি কাজে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করি।

রাজের দিন

০৭.০০
বাড়িতে

শিশুর অভিজ্ঞতা

ঘুম থেকে উঠলে নিজেকে সতেজ মনে হয় আর সকালের খাবার খেতে ভাল লাগে। প্রথমে আমি চায়ের দোকানে বসি, আর তার পরে চায়ের দোকানের কাছের অন্য আরেকটা দোকান থেকে খাবার নিয়ে আসি। সকালের খাবার খাওয়ার পরে ভাল লাগে, দেহে তখন পূর্ণ শক্তি থাকে।

গবেষকদের অভিজ্ঞতা

সকালে আমি যখন রাজের বাড়িতে যাই, তখন দেখি যে সে কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। যখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি যে সে সকালের খাবার খেয়েছে কিনা, সে উত্তর দেয় যে সে খেয়েছে।

রাজ নদীর পাড়ে হাঁটছে

০৮.০০
কাজে যাওয়া

শিশুর অভিজ্ঞতা

বড় রাস্তা পার হতে ভয় লাগে, কাজের জায়গায় যেতে আমাকে প্রতিদিনই পার হতে হয়। কোনও ডিভাইডার নেই, গাড়িগুলি দুই পাশ থেকেই আসতে থাকে, এটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাত্রিবেলায় বাসগুলি এতো জোরে যায় যে যদি কেউ দাঁড়িয়ে থাকে অথবা রাস্তা দিয়ে যায় তাহলে এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে….. দীর্ঘক্ষণ হর্ন আর হুইসেল বাজিয়ে বাসটা চলে

গবেষকদের অভিজ্ঞতা

রাজের কাজের যাওয়ার পথে একটা সরু খাল আছে, যার উপরে বাঁশের একটা সাঁকো আছে। আমরা যদি অনেকবার এই সাঁকোটা পার হই, তাহলে একবার দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।

Dangerous open staircase

বিপজ্জনক খোলা সিঁড়ি

০৮.১৫ – ১৩.৩০
সকালবেলায় বিল্ডিং সাইটে কাজ করা

শিশুর অভিজ্ঞতা

কাজের জায়গায় আমি বেলচা দিয়ে বস্তায় বালি ভর্তি করি, জল বয়ে আনি আর অন্য যাদের সঙ্গে কাজ করি তাদের জন্য ছুটকো কাজ করি। অনেক পরিশ্রমের কাজ। বস যাতে সিগারেট টানতে পারে তার জন্য সাততলার উপর থেকে নিচে নেমে দেশলাই কিনে আবার উপরে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ নয়।

চামড়ার কারখানায় কাজ করতে আমার বেশি স্বস্তি বোধ হয়, কারণ সেখানে আমার সমবয়সীরা কাজ করে, আর নির্মাণের কাজে অধিকাংশই বয়স্ক লোকেরা কাজ করে। নির্মাণের কাজে আমি স্বস্তি বোধ করি না কারণ সহকর্মীদের সঙ্গে আমি খুব বেশি কথাবার্তা বলি না।

লাঞ্চের সময় যত এগিয়ে আসে আমার পেটে খিধার জ্বালা শুরু হয়। খাওয়ার পরে আমি আরও কাজ করতে পারি।

গবেষকদের অভিজ্ঞতা

রাজ দিনে ১১ ঘণ্টা কাজ করে, সে তার মনিবের জন্য সিমেন্ট, বালি আর জলের মিশ্রণ বয়ে নিয়ে যায়, তার মনিব নতুন একটি সাততলা বাড়ি তৈরি করছেন।

রাজ প্রায়ই ভারী বোঝা নিয়ে যায়। বাড়িটির সিঁড়িতে কোনও রেলিং নেই, তাই উপরে নিচে ওঠা নামা করতে তার ভয় লাগে, ঝুঁকিও আছে। বাড়িটির ছাত খোলা, চারপাশে কোনও দেওয়াল নেই। তাই যে কোনও সময়েই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

১২ জন শ্রমিকের মধ্যে রাজ সবচেয়ে ছোট। তাই অন্যরা তাকে সিঁড়িতে উপর-নিচ করে বিভিন্ন জিনিস নিয়ে আসতে বলে, যেমন পান, সিগারেট, দেশলাই, বিস্কিট ইত্যাদি। আসে সাততলা থেকে নিচের তলায় নেমে এইগুলি নিয়ে আসে। মনে হয় সে ছোট বলে তাকে অতিরিক্ত কাজ দেওয়া হয়।

যদিও (রাজ) এটাকে ভাল বলে, তবে তার কাজ খুব কঠিন।

নির্মাণাধীন বাড়ি

১৩.৩০
দুপুরের খাবার খেতে বাড়ি যাওয়া

শিশুর অভিজ্ঞতা

দুপুরের খাওয়ার জন্য আমি ১.৩০-এ বাড়িতে যাই, এটাই আমার সাধারণ নিয়ম। সারা সকাল কাজ করার পরে হেঁটে আসতে ভাল লাগে, তবে ভাত খাওয়ার পরে আমার ক্লান্তি আসে, শরীর তখন আর কাজে ফিরতে সায় দেয় না। দুপুরের খাওয়ার পরে দেড় কিলোমিটার হাঁটতে ভাল লাগে না। কিন্তু আমাকে করতে হয়।

গবেষকদের অভিজ্ঞতা

দুপুরবেলা বাড়িতে খেতে আসার সময় রাজ সেই বাঁশের সাঁকো পার হয়ে আসে। মুখ ধোয়ার পরে রাজ আমাকে বলল দুপুরের খাবার খেয়ে আসতে আর তার পরে বেলা ৩টায় আবার দেখা করতে। রাজের দিনের বিষয়গুলি, যেমন তার কাজের জায়গায় হেঁটে যাতায়াত করাকে সে ভাল বললেও আসলে সেটা তার কাছে বিরক্তিকর এবং ক্লান্তিকর বলে মনে হয়।

রাজ নির্মাণ-স্থলে কাজ করছে

১৫.০০ – ২০.০০
দুপুরের পরে কাজ করা

শিশুর অভিজ্ঞতা

পৌঁছানোর পরে আমরা একটু চা খেয়ে নিলাম আর তারপরে আবার কাজ শুরু করলাম।

আমি যখন অন্য আরেকটা নির্মাণের কাজ করতাম তখন আমার মালিক আমাদের দুপুরের খাবার দিতেন।

গবেষকদের অভিজ্ঞতা

মনে হয় রাজ নিজের দুঃখ নিজের মনে লুকিয়ে রেখেছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা সে কাজ ছাড়া আর কিছুই করে না, কিন্তু আমি তাকে একবারের জন্যও হাসতে দেখিনি।

২০.১৫
সন্ধ্যাবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া

শিশুর অভিজ্ঞতা

দিনের শেষে কাজ যখন শেষ হয়ে যায় তখন বেশ ভাল লাগে, তখন সময় হল বাড়ি ফেরার। কিন্তু আমার দুর্বল আর অসুস্থ বোধ হচ্ছে।

বাড়ি ফিরে আমি কয়েকটা পোশাক ধুয়ে দিই আর তারপরে গোসল করি,সতেজ হয়ে আমি ভাল পোশাক পরি। আমি হাঁটতে হাঁটতে একটা চায়ের দোকান গিয়ে বসি, বসে চা আর পানি খাই। তারপরে অন্য ছেলেদের সঙ্গে আমি আমাদের এলাকায় ঘুরতে থাকি। আমরা ছাদে উঠি। কখনও কখনও আমরা বন্ধুর বাড়ির ছাদে উঠি, কখনও কখনও আমাদের বাড়ির ছাদেও উঠি।

সাগিরের যাত্রা অন্বেষণ করুন