সঞ্জু, ১৬ বছর বয়সী ছেলে
সঞ্জুর জীবন সম্পর্কে
সঞ্জু তার বাবা, মা, বড় ভাই, ভাবী এবং ছোট বোনের সাথে একটা দুই কামরার বাড়িতে থাকে।
সঞ্জুর বাবা ও মা দুজনেই রাতে কাজ করেন। মা একটা দোকান চালান, এবং বাবা একটা কারখানায় কাজ করেন। সঞ্জু খুব ছোটবেলা থেকেই কাজ করছে। তার বর্তমান কর্মস্থল একটা চামড়া কারখানা, সেখানে সে মেশিন অপারেটর। তাকে প্রতি মাসে BDT ১০০০০ (US $৯১) বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল কিন্তু সে সাধারণত ৭-৮০০০ BDT (US $৬৩-৭৩) পায়, মাসের যে দিনগুলি সে কাজ করে না সেই সব দিনের বেতন কেটে নেওয়া হয়। সঞ্জু সন্ধ্যায় তার বন্ধুদের সাথে পার্টি করে কাটায়। পার্টি করে মানে সঞ্জু বাড়ির ছাদে মদ ও গাঁজা খায়।
১৩ মার্চ ২০২৩ তারিখে, সঞ্জু তার প্রাত্যহিক জীবন, বাড়িতে, কর্মস্থলে ও বন্ধুদের সাথে তার জীবনযাত্রা এবং অভিজ্ঞতা রেকর্ড করেছিল। সে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে কাজ করে, মাঝে চা খেতে এবং এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে বিরতি নেয় । সঞ্জু তার সাথে যথেষ্ট পরিমাণে গাঁজা রাখে এবং সারাদিন নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে ধূমপান করে।
শিশুরা ছাদের উপরে গাঁজা খাচ্ছে
“আগের মেশিন অপারেটর একটি দুর্ঘটনায় কাটা পড়েছিল, সেকারণে আমাকে হেলপার থেকে মেশিন অপারেটরে পদোন্নতি করা হয়েছিল। আমি খুব সাবধানে কাজ করছি এবং কোনও দুর্ঘটনার সম্মুখীন হইনি।”
গাঁজা খাওয়া/রাস্তায় মাদক গ্রহণের দৃশ্য
সঞ্জুর মনে হয় তার কর্মস্থল এবং তার সমাজের লোকেরা তার জন্য নিরাপদ। সে অনুভব করে, যে কারখানায় সে কাজ করে সেখানে অপারেটিং মেশিন সবচেয়ে কম নিরাপদ, তার মনে হয় যে এগুলি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ।
তার কর্মস্থলের কাছাকাছি একটা জায়গা আছে যেখানে সে গাঁজা এবং এস্টাসিড ট্যাবলেট কেনে। সঞ্জু সেখানে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় থাকে। তার দৃষ্টিভঙ্গিতে ড্রাগ নেওয়া আরামদায়ক এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।
সঞ্জুর ছোটবেলায় তার বাবা মাতাল হয়ে বাড়িতে আসত এবং মাকে মারধর করত। সঞ্জুর বাবার জুয়া খেলার এবং মদ খাওয়ার অভ্যাস আছে এবং এটা পরিবারের বারবার আর্থিক সংকট তৈরি করবার একটা মুখ্য কারণ।
“অধিকাংশ দিন বাড়িতে রান্নার গ্যাস না থাকায় রান্না হয় না। বাড়িতে না খাওয়াটাই আমার কাছে স্বাভাবিক”
• যে করিডোর সঞ্জুর বাড়ির দিকে যায় (এক বড়ো বাড়ির ভিতরে অনেক ছোট ছোট থাকার জায়গা)
সঞ্জু তার কর্মস্থলে
সঞ্জু তার ভবিষ্যতের কথা ভাবছে। তার সাথে কাজ করে একটা মেয়েকে তার ভাল লাগে এবং সে তার ম্যানেজারের মাধ্যমে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছে, কিন্তু মেয়েটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। সঞ্জু তার বিকালের কাজের বিরতিতে একটি বিবাহিত মেয়েকে সাহায্য করে, যার তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছে। সঞ্জু তাকে কিছু তাকে কিছু টাকা দেয় এবং একজন ভালো বন্ধু হিসেবে তার স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করে।
সঞ্জু তার দুপুরের খাবারের বিরতিতে এক বন্ধুর সাথে হাঁটছে
সঞ্জুর দিন
শিশুর অভিজ্ঞতা
গতকাল আমার বন্ধুরা সবাই বেতন পেয়েছে। তাই, আমরা সারা রাত ধরে পার্টি করছিলাম। যদিও আমি আমার বেতন পাইনি, তবুও আমি আমার বন্ধুদের সাথে রাতে আনন্দে করেছি। আমরা সবাই মদ খেয়েছি এবং ধূমপান করেছি এবং সারা রাত ঘুমাইনি।
সকালে আমি পেট ভরে নাস্তা খেয়েছি। সেকারণে এখন, আমি ক্লান্ত বোধ করছি। কিন্তু আমি বিশ্রাম নিতে পারব না, আমাকে কারখানায় কাজে যেতে হবে। আমি আজ ছুটি নিতে পারতাম, কিন্তু আমি গতকাল কারখানায় যাইনি এবং গতপরশু আমি অর্ধেক দিন ছুটি নিয়েছিলাম। কাজেই, আমি কর্মস্থলে ক্লান্ত এবং দুর্বল হয়ে পড়ব জেনেও, আমার কাজে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
আমি সঞ্জুকে রাস্তায় একটা দোকানের সামনে বসে থাকতে দেখি। সে সারারাত পার্টি করে আর ঘুমাতে পারেনি।
সঞ্জু গাঁজা খেতে বাড়ির ছাদে ওঠে। সে বলে তাকে নিয়মিত ধূমপান করতেই হবে। এটা ছাড়া তার সারাটা দিন খারাপ হয়ে যাবে।
বিশ্রামের জন্য তার কিছুটা সময় থাকলেও সে বাড়ি না গিয়ে তার কারখানার দিকে যায়।
পাড়ার একটি রাস্তা
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমার বসের কারখানা খোলার জন্য অপেক্ষা করবার সময় আমি চা খাবো এবং ধূমপান করব। বসের কাছ থেকে নাস্তার টাকা নিতে গেলে তিনি আমাকে বলেছিলেন যে আমার ফ্যাক্টরিতে পছন্দের মেয়েটি আমার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এখন আমি প্রত্যাখ্যাত বোধ করছি। আমাকে এমন কিছু করতেই হবে যাতে সে আমাকে গুরুত্ব দেয়। এ মুহূর্তে আমি ভাবতে পারছি না আমি এখন কী করব, এ বিষয়ে আমি পরে চিন্তা করব।
চায়ের দোকানে আমি দুই কাপ চা আর একটা সিগারেট খাই। আমি আট বছর বয়স থেকে বাড়িতে নাস্তা খাইনি। আমাকেই আমার নাস্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
এই মুহূর্তে, গাঁজা খেয়েছি বলে আমার ততটা খারাপ লাগছে না। কিন্তু পরে, কর্মস্থলে, আমার খারাপ লাগতে পারে। যথারীতি কাজের চাপ বাড়লে, খারাপ লাগবে।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
সঞ্জুর বাড়িতে, পরিবারের প্রত্যেক সদস্য আলাদাভাবে নিজেদের নাস্তার ব্যবস্থা করে। তার বাবা-মা তাকে সকালের খাবারের জন্য কোনও টাকা দেন না।
সঞ্জু তার দুপুরের খাবারের বিরতিতে এক বন্ধুর সাথে হাঁটছে
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমার কাজ করার কোনও ইচ্ছা নেই তবুও করতে হবে গত দু’দিন আমি কাজ করিনি বলে । দুই ঘণ্টা কাজ করার পরে, আমি এখন একই সাথে ভাল এবং খারাপ অনুভব করছি। যেন আমার ভিতরে একটা মিশ্র আবেগ কাজ করছে।
আমি তন্দ্রা এবং মাথাধরা অনুভব করছি। আমি একটু ঘুমাতে চাই, কিন্তু ঘুমাতে পারব না। আমি অস্থিরতা এবং অস্বস্তি বোধ করছি। আমার চোখ ভারি হয়ে আসছে এবং আমার পক্ষে জেগে থাকা কঠিন হয়ে উঠছে। আমি জানি আমায় সতর্ক ও মনোযোগী হতে হবে এবং আমার কাজ শেষ করার ব্যাপারে আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
সঞ্জু কারখানায় প্রকাশ্যে ধূমপান করে। ক্লান্তি ও অবসাদ কাটাতে, তার কাজের সময় সারাদিনে সে অনেকবার সিগারেট এবং গাঁজা খায়।
মেশিন চালানোর ফলে কালশিটে পড়া হাত
শিশুর অভিজ্ঞতা
এখন প্রায় দুপুর ২টা। আমি আমার বান্ধবীর সাথে আছি, এবং আমি ওর সাথে ভাল সময় কাটাচ্ছি। কাজ থেকে দূরে আছি তাই আমি খুশি। আমার বান্ধবীকে সাহায্য করতে পেরে, আমার ভাল লাগছে। যদিও তাকে সাহায্য করে আমি কিছুই পাবো না আমি তার সাথে এখানে একসঙ্গে থাকতে পেরে খুশি। আমি সবসময় আমার বন্ধুদের এবং আমার পরিচিতদের সাহায্য করার চেষ্টা করি। যেহেতু সে আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী, তাকে সাহায্য করতে আমার ভাল লাগে। তাকে তার কর্মস্থলে নামানোর পর আমি আমার কারখানায় যাই। দুপুরের খাবার না খেলেও আমার খিদে পাচ্ছে না। কারণ সকালে প্রচুর খাবার খেয়েছি। তাই এখনই কাজ শুরু করতে পারি।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
এখন সঞ্জুর বিরতির সময়। আজ দুপুরে সে খাবার না খেয়ে তার বান্ধবীর সাথে কোথাও সময়টা কাটাচ্ছে। সে এবং তার বান্ধবী তাবিজ তার বান্ধবীর স্বামীকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। সে তার বান্ধবীর সাথে থাকা উপভোগ করে।
সঞ্জু যে মেশিনটা চালায়
শিশুর অভিজ্ঞতা
আমার ভাল লাগছে। আমি এখন আগের চেয়ে বেশি স্বস্তি অনুভব করছি। লাঞ্চের বিরতির আগে আমার কাজ করার ইচ্ছে হচ্ছিল না। এখন আমার সম্পূর্ণ শক্তি না থাকলেও আমি আগের চেয়ে ভালো বোধ করছি, কারণ আমি কাজ থেকে একটু বিরতি নিয়েছি। যদিও আমার সুপারভাইজার আমার উপর চিৎকার করেছিলেন, কাজে দেরী করে ফিরে আসার জন্য, আমি পাত্তা দিই না। কয়েক ঘণ্টা পরে, আমার আর ঘুম আসছে না। আমি এখন ভাল বোধ করছি। তাছাড়া, কিছুক্ষণ আগে গাঁজা খেয়েছিলাম। তাই, আমি সতেজ বোধ করছি।
গবেষকদের অভিজ্ঞতা
দিনের শেষের দিকটা সঞ্জুর জন্য খুবই উদ্দীপনাপূর্ণ। এক ঘণ্টার মধ্যে সে এই কারখানা থেকে বের হতে পারবে। অন্য এক কারণেও সে উত্তেজনা বোধ করছে। তার বান্ধবী ফ্যাক্টরিতে এসে বলে গেছে তার বাড়িয গল্প করতে যেতে।